গাজীপুর জেলা ও এর ইতিহাস

জন্মস্থান গাজীপুর সম্পর্কে যতো জানি ততোই ভালো লাগে। আসলে আমরা ছোট বেলা থেকে বড় হয়েছি গাজীপুর মানেই ভাওয়াল রাজা ও ভাওয়াল সন্নাসী গল্প শুনে। এই ভাওয়াল সন্ন্যাস গুল্পগুলোর মধ্য দিয়ে গাজীপুরের অতীত ইতিহাস ও সঠিক ইতিহাস আমরা আগে থেকে জানতে পারিনি বা কম জেনেছি। এই সময়ে এসে গাজীপুর নিয়ে যতো জানি ততোই ভালো লাগে এবং আশ্চর্য হই… সেই ভালো লাগা থেকে এই পর্যন্ত গাজীপুরের ইতিহাস এর উপরে যে বইটি সামনে পেয়েছি সেটাই ক্রয় করেছি।

ধীরে ধীরে এগুলো জানবো এবং আমার এই পেজ এ যুক্ত থাকা বন্ধুদেরকেও জানানোর চেষ্টা করবো। ভাওয়াল রাজা, রাজা রাজেন্দ্র নারায়ণ রায় এর মামলা ও তাকে নিয়ে রঙ্গরসের গল্পের পিছনে চাপা পড়ে আছে আমাদের এই গাজীপুরের সোনালী ইতিহাস ঐ ঐতিহ্য। বিশেষ করে ইতিহাসের পাতায় সবচেয়ে বেশী অত্যাচারিত হয়েছে এই অঞ্চলের মুসলিম শাসকগণ।

এই গাজীপুরের প্রথম নাম ছিল ভাওয়াল (মজার বিষয় হলো এই ভাওয়াল নামটা একজন মুসলিম শাসকের নাম যা আমি নিজেও জানতাম না) এরপর এর নাম হয় জয়দেবপুর। সর্বশেষ গাজীপুর… আধুনিক যুগের শুরুতে অন্তত নামকরণের দিক দিয়ে গাজীদেরকে একটু মনে করা হয়েছে। এর আগে শুধু অত্যাচারিত হয়েছে বিশেষ করে ইতিহাসের উপর লিখা প্রত্যেকটা বইয়েই গাজী বংশকে ছোট করা হয়েছে; যারা নাকি একেকজন ছিল খুবই ভালো শাসক। এই গাজীদেরকে ইতিহাসের এমন ভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে যাদের নাম নিলে এখনো মানুষ নাক ছিটকায়! এর প্রমাণ আমি নিজেই পেয়েছি গাজীদের পূর্বপুরুষের ভিটা চৌড়া গ্রামে গিয়ে। যেমন, “এক লোকের কাছে সেদিনও শুনলাম, গাজীরা নাকি রাস্তায় বের হলে কোন গর্ববতী নারী সামনে পেলে জীবিত এই নারীর পেট কে*টে বাচ্চা দেখতো” কতোটা ভয়ংকর অপবাদ যা একবারেই মিত্যাচার!

বর্তমানে এই এলাকার মানুষ এই মহান শাসকদের নামও শুনতে পারে না কারণ ইতিহাস তাদেরকে ওইভাবেই বোঝাবো হয়েছে। এই গাজীপুরের প্রথম পুরুষ ছিলেন বা গাজী বংরের প্রতিষ্ঠাতা (ছবিতে যে কবরটি দেখা যাচ্ছে) পল্লুন শাহ বা পাহলোয়ান শাহ গাজী। তার বংশধররাই পর্যায়ক্রমে গাজীপুরের অনেক অংশ শাসন করেছেন। তাদের মধ্যে ফজল গাজীর প্রভাব ছিল এখানে সবচেয়ে বেশি। এজন্যই অনেকে মনে করেন পরবর্তীতে ফজল গাজীর নামানুসারে গাজীপুরের নামকরণ করা হয় গাজীপুর। আবার অনেকে ধারণা করেন পাহলোয়ান শাহ গাজীর নামানুসারে এই গাজীপুরের নামকরণ হয়েছে।

আমি গাজীপুর নিয়ে যতোগুলো বই পড়েছি, সবগুলো ইতিহাস মিলানোর পরে দেখলাম সঠিক ইতিহাসের শেষ আশ্রয়কেন্দ্র উইকিপিডিয়াতেও অনেক ভুল তথ্য দেয়া রয়েছে। [আমি সময় করে সঠিক তথ্যসুত্র দিয়ে এগুলো সংশোধন করার চেষ্টা করবো] গাজীপুর নিয়ে রফিকুল হক আখন্দ স্যার ছোট একটা বইয়ের মধ্যে (ভাওয়াল জমিদারের গাজী বংশ) খুবই সুন্দরভাবে এগুলো উপস্থান করেছেন। বইটা পড়ে আমি খুবই মর্মাহত হয়েছি! বইটার প্রতি নিয়, ইতিহাস কিভাবে মাটিচাপা দেয়া হয়েছে সেটা জেনে! আমাদের সোনালী ইতিহাস কি ছিল আর এর বদলে আমরা কি জেনে বড় হয়েছি!

আমি আরো আশ্চর্য ও মর্মাহত হয়েছি চৌড়া গ্রামে গিয়ে, গাজীদের কোন অবদান তারা স্বীকার করে না। এর বিপরীতে আরো অপবাদ আর অপমান! পাহলোয়ান শাহ গাজী যে ভূমিতে শুয়ে আছে এই ভূমিটা ২/৩ বছর আগেও অন্যদের দখলে ছিল কিন্তু ভূমি জরিপ করতে গিয়ে দেখা যায় এই যায়গা এই মহান লোকের নামে ওয়াকফ করা! এরপর ওরা (দখলকারীরা) এই যায়গা ছেড়ে দেয়, যদিও এই মামলা এখনো চলমান।

  1. গাজী বংশের ১১ জন শাসক এই গাজীপুর প্রায় ৫০০ বছর শাসন করেছেন অথচ আমরা শুধু ভাওয়াল রামেদ্র নায়ায়নদের কিছু সময় শাসনকাল নিয়ে আলোচনা করে থাকি। গাজীদের মনে করি না তাদের নিয়ে গল্প করি না… শুধু তাই নয়, বলরাম রায় নামের লোকেরা এই জমিদারি এক প্রকার চক্রান্ত করেই এই জমিদারি ওদের দখলে নেয়… ইতিহাস লেখকরা ইতিহাস লিখিতে গিয়ে ইতিহাসের উপর যে অত্যাচার করেছে আধুনিক যুগের এই সময়ে সবই কিছুই প্রকাশ হয়ে যাবে এবং প্রকাশ হতে থাকবে… নির্ভরযোগ্য তথ্যসুত্র দিয়ে আমি মোহাম্মদ খলিলুর কাদেরী বিস্তারিত ইতিহাস এভাবেই প্রকাশ করবো… আশাবাদী সকলেই সাথে থাকবেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *