শরিফ ওসমান বিন হাদি কে (জীবন ও কর্ম)

শরিফ ওসমান বিন হাদি 
শরিফ ওসমান বিন হাদি বা ওসমান হাদি (৩০ জুন ১৯৯৩ – ১৮ ডিসেম্বর ২০২৫) ছিলেন একজন বাংলাদেশি রাজনৈতিক কর্মী ও বক্তা, যিনি জুলাই গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে গঠিত রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র হিসেবে পরিচিত। তিনি ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-৮ আসন থেকে সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করার ঘোষণা দিয়েছিলেন। হাদি জুলাই শহিদদের অধিকার রক্ষা ও আওয়ামী লীগ নিষেধাজ্ঞা আন্দোলন এবং ভারতীয় আধিপত্যবাদবিরোধী সক্রিয় রাজনীতির জন্য আলোচনায় আসেন।

২০২৫ সালের ১২ ডিসেম্বর তিনি জুমার নামাজের পর ঢাকার বিজয়নগরের বক্স কালভার্ট এলাকায় গুলিবিদ্ধ হন এবং ১৮ ডিসেম্বর সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন।



প্রাথমিক জীবনঃ
ওসমান হাদি ঝালকাঠি জেলার নলছিটি উপজেলায় এক মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা একজন মাদ্রাসা শিক্ষক ও স্থানীয় ইমাম ছিলেন। ৬ ভাইবোনের মধ্যে হাদি সর্বকনিষ্ঠ। হাদি তার প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাজীবন শুরু করেন নলছিটি ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসা থেকে, সেখান থেকে তিনি তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করে চতুর্থ শ্রেণিতে ঝালকাঠি এন এস কামিল মাদ্রাসায় ভর্তি হন, সেখানে তিনি আলিম পরীক্ষা সম্পন্ন করে পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হন।

হাদি ইংরেজি শেখার একটি প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ছিলেন এবং সর্বশেষ ইউনিভার্সিটি অব স্কলারস নামে একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি শিক্ষকতা করছিলেন।

রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডঃ
হাদি ঢাকার রামপুরা এলাকায় বসবাস করতে শুরু করেন। জুলাই আন্দোলনের সময় তিনি স্থানীয় সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিলেন এবং রামপুরা এলাকার সমন্বয়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

২০২৪ সালের জুলাই গণঅভ্যুত্থান ও পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার দাবিতে হওয়া আন্দোলনে হাদিকে অন্যতম তরুণ নেতৃত্বদের একজন হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

ইনকিলাব মঞ্চঃ
জুলাই গণঅভ্যুত্থানে অংশগ্রহণকারী ছাত্র-জনতার অভিজ্ঞতা ও দাবির ভিত্তিতে গঠিত সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম ইনকিলাব মঞ্চ শরিফ ওসমান হাদির হাত ধরে প্রতিষ্ঠিত হয়। সংগঠনটির ঘোষিত লক্ষ্য হলো সমস্ত আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা এবং “ইনসাফভিত্তিক” একটি রাষ্ট্রব্যবস্থা গঠন, যেখানে গণতান্ত্রিক অংশগ্রহণ ও ন্যায়বিচার প্রধান মূল্যবোধ হিসেবে থাকবে।

ইনকিলাব মঞ্চ গঠনের পর জুলাই অভ্যুত্থানের স্মৃতি রক্ষা, অপরাধীদের বিচার, আহত-নিহত ব্যক্তিদের স্বীকৃতি এবং জুলাই চার্টার ঘোষণার দাবি তুলেন হাদি। যা তাকে রাজনৈতিক আলোচনার কেন্দ্রে নিয়ে আসে।

আওয়ামী লীগ নিষেধাজ্ঞা আন্দোলনঃ
২০২৫ সালে আওয়ামী লীগকে সন্ত্রাসী ও রাষ্ট্রদ্রোহী সংগঠন হিসেবে নিষিদ্ধ করার দাবিতে “ন্যাশনাল অ্যান্টি-ফ্যাসিস্ট ইউনিটি” ব্যানারের অধীনে যে দেশব্যাপী আন্দোলন গড়ে ওঠে, সেখানে ইনকিলাব মঞ্চ অন্যতম অংশগ্রহণকারী সংগঠন হিসেবে সক্রিয় ভূমিকা রাখে।[১১] ইনকিলাব মঞ্চের মাধ্যমে হাদি আওয়ামী লীগের দমন-পীড়ন ও হত্যাকাণ্ডের জন্য দায়ী করে নিষেধাজ্ঞার দাবি তুলে ধরেন এবং দাবি না মানলে সচিবালয় ঘেরাওয়ের হুমকি দেন। "১৪-১৫ বছর ধরে বাংলাদেশে এই ফ্যাসিবাদ কায়েম হয়েছে। বিচার চাই না ফাঁসি চাই বলে হাজার হাজার আয়নাঘর কায়েম করা হয়। রোজা ভাঙিয়ে আমার বোনকে ধর্ষণ করা হয়। বাংলাদেশে বেগম জিয়ার বিনা চিকিৎসায় হাত বাঁকা করে ফেলা হয়েছে। আল্লামা সাঈদীকে মেডিক্যালে চিকিৎসার নামে এখানে এনে হত্যা করা হয়। মোশতাককে জেলের মধ্যে হত্যা করা হয়। মাইকেল চাকমার জীবন শেষ করে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। সর্বশেষ হেলিকপ্টার থেকে গুলি করে আমাদের ভাই-বোনদের কলিজা ছিন্নভিন্ন করে দেওয়া হয়। সেই টার্মকে বৈধতাই শুধু নয় অপরিহার্য জরুরত হিসেবে প্রমাণ করেছে এই শাহবাগ। — ওসমান হাদি"

অন্য বক্তব্যগুলোতে হাদি নিজেকে ও তার সংগঠনকে “ফ্যাসিবাদের” আপসহীন বিরোধীশক্তি হিসেবে উপস্থাপন করেন। একই সঙ্গে তিনি যুক্তি দেন যে জুলাইয়ের আন্দোলনকারীদের উচিত আওয়ামী লীগকে আবার রাজনৈতিক বৈধতা ফিরে পেতে না দেওয়া।

অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের ঘোষণা দিলে ওসমান হাদি ইনকিলাব মঞ্চের পক্ষ থেকে দল ও ব্যক্তির বিচার করার জন্য পৃথক ট্রাইব্যুনাল গঠন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নিরাপরাধ কর্মীদের প্রায়শ্চিত্তের জন্য কমিশন গঠন এবং ৫ আগস্ট ২০২৫ সালের মধ্যে জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্র প্রকাশ করার প্রস্তাব দেন।

জাতীয় সরকার গঠনের দাবিঃ
২০২৫ সালের ২৪ মে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে ইনকিলাব মঞ্চ আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ওসমানি হাদি জাতীয় সরকার গঠনের দাবি করেন। তিনি বলেন, "আমরা আবারও জাতীয় সরকারের দাবি করছি; যেখানে বিএনপি, জামায়াত, ইসলামী আন্দোলন থেকে শুরু করে সব রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিত্ব থাকবে। ফ্যাসিবাদবিরোধী সব শক্তিকে নিয়ে জাতীয় সরকার করতে হবে।"

বিএনপি ও পুরনো ধারার রাজনীতি নিয়ে মতামতঃ
২০২৫ সালের জুলাইয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে শরিফ ওসমান হাদি বলেন, বিএনপি যদি “পুরনো ধারায়” রাজনীতি করে ক্ষমতায় আসে, তবে তারা দুই বছরও ক্ষমতায় টিকতে পারবে না। তিনি সেখানে জনগণকেন্দ্রিক রাজনৈতিক ধারা গড়ে তোলার উপর গুরুত্বারোপ করেন এবং সতর্ক করেন যে শুধু সংসদে বসে “দেশবিরোধী আইন” করলে জনগণ তা মেনে নেবে না।

অন্তর্বতীকালীন সরকারের সমালোচনাঃ
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাঠামোগত দুর্বলতা এবং দৃশ্যমান পরিবর্তনের ঘাটতির সমালোচনা করে হাদি সব দলের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করে মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান করে একটি জাতীয় সরকার গঠনের প্রস্তাব করেন।

ঢাকা-৮ আসন থেকে প্রার্থিতাঃ
২০২৫ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-৮ আসন (মতিঝিল, শাহবাগ, রমনা, পল্টন ও শাহজাহানপুর নিয়ে গঠিত) থেকে প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দেন শরিফ ওসমান হাদি। মতিঝিল, শাহবাগ, রমনা, পল্টন ও শাহজাহানপুর নিয়ে গঠিত এই আসনে তিনি প্রচলিত রাজনীতির বাইরে গিয়ে এলাকাবাসীর সঙ্গে সরাসরি মতবিনিময় ও “চা-সিঙ্গারা” আড্ডার আয়োজনের কথা জানান। এছাড়া তিনি জনগণের পরামর্শ অনুযায়ী তার নির্বাচনি ইশতাহার ঠিক করবেন বলে ঘোষণা দেন। তার এই ভিন্নধর্মী প্রচারণা নাগরিক সমাজে ব্যাপক প্রশংসিত হয় এবং গণমাধ্যমে তুমুল আলোচনার জন্ম দেয়।

নির্বাচনি প্রচারণায় কর্মী ও সমর্থকদের মধ্যে মুড়ি-বাতাসা বিতরণের ছবি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনায় আসেন তিনি। এছাড়া ভোররাতে মসজিদের সামনে লিফলেট বিতরণ, ডোনেশনের মাধ্যমে তহবিল সংগ্রহ এবং সংগৃহীত অর্থের হিসাব সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশ করায় তার জনপ্রিয়তা ক্রমশ বৃদ্ধি পায়। সম্প্রতি নির্বাচনি প্রচারণার সময় ওসমান হাদির পকেটে একজন টাকা ঢুকিয়ে দিচ্ছেন—এমন একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে ব্যাপক আলোড়নের সৃষ্টি হয়।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রায় নিয়ে অবস্থানঃ
২০২৫ সালের নভেম্বর মাসে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালের বিরুদ্ধে প্রদত্ত মৃত্যুদণ্ডের রায় ঘোষণার পর আদালত প্রাঙ্গণে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে শরিফ ওসমান হাদি মন্তব্য করেন যে এই রায় “পুরো পৃথিবীর জন্য নজির স্থাপন করেছে” এবং কোনো স্বৈরাচার দীর্ঘকাল মানুষের ওপর নিপীড়ন চালিয়ে যেতে পারে না।

সৃষ্টিকর্মঃ
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর তিনি জনপ্রিয় হয়ে উঠলেও এর পূর্বে তিনি শিল্প-সাহিত্য, পাঠচক্র এবং অন্যান্য এক্টিভিজমে সক্রিয় ছিলেন। ‘সীমান্ত শরিফ’ ছদ্মনামে ২০২৪ সালের একুশে বইমেলায় দুয়ার প্রকাশনী থেকে লাভায় লালশাক পুবের আকাশ নামে একটি কাব্যগ্রন্থ প্রকাশ করেন।

বিতর্কঃ
২০২৫ সালে জাতীয় নাগরিক পার্টির ডাকা মার্চ টু গোপালগঞ্জ ক্যাম্পেইনে সংঘর্ষের প্রেক্ষিতে তিনি গোপালগঞ্জ জেলা ভেঙে দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে গালিগালাজপূর্ণ ভাষায় তীব্র সমালোচনা করেন, যা ব্যাপক সমালোচনা ও আলোড়নের সৃষ্টি করে।[৩৩] পরবর্তীকালে বিতর্কের মুখে তিনি তার গালিকে মুক্তির মহাকাব্য হিসেবে আখ্যায়িত করেন এবং কেউ দুঃখ পেয়ে থাকলে তাদের কাছে দুঃখ প্রকাশ করেন।

ব্যক্তিগত জীবনঃ
ব্যক্তিগত জীবনে ওসমান হাদি বিবাহিত এবং এক সন্তানের জনক।

হামলা ও মৃত্যুঃ
হাদি পূর্বে জানিয়েছিলেন যে তিনি ফোনকল ও বার্তার মাধ্যমে মৃত্যু-হুমকি পেয়েছেন। এসব হুমকির মধ্যে ছিল তার বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেওয়া এবং পরিবারের নারী সদস্যদের ক্ষতি করার হুমকি। তিনি আরও বলেন যে, এমন হুমকি তাকে আন্দোলন থেকে বিরত রাখতে পারবে না।

২০২৫ সালের ১২ ডিসেম্বর, প্রায় দুপুর ২টা ২৫ মিনিটে, মসজিদ থেকে ফেরার সময় রাজধানীর পল্টনের বিজয়নগরের কালভার্ট এলাকায় হাদি গুলিবিদ্ধ হন। মোটরসাইকেলে করে আসা হামলাকারীরা হাদির মাথা লক্ষ্য করে গুলি চালায়। এই ঘটনায় পুলিশ সন্দেহভাজন হিসেবে ফয়সাল করিম মাসুদ ও আলমগীর শেখকে শনাক্ত করে, যারা দুজনই আওয়ামী লীগের সক্রিয় সদস্য। এছাড়া হামলার আগে হাদির ওপর নজরদারিতে রুবেল নামে আরেক ব্যক্তি জড়িত ছিলেন বলে জানানো হয়। পুলিশ জানায়, হাদিকে গুলি করেন ফয়সাল করিম মাসুদ এবং মোটরসাইকেল চালাচ্ছিলেন আলমগীর শেখ।[৩৯] হামলাকারীদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তারে সহায়ক তথ্যের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ৫০ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করে। সাংবাদিক জুলকারনাইন সায়ের জানান, এক হামলাকারী সীমান্ত পার হয়ে ভারতে চলে গিয়েছে। পুলিশ নারায়ণগঞ্জ থেকে ফয়সালের সহযোগী দাঁতভাঙ্গা কবিরকে আটক করে।ফয়সালের স্ত্রী, শ্যালক ও বান্ধবীকেও আটক করে রিমান্ডে নেয় পুলিশ।

এই হামলার পর হাদিকে দ্রুত ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নেওয়া হয়। এরপর তাকে হাসপাতালের ওয়ান-স্টপ ইমার্জেন্সি সেন্টারে নেওয়া হয়। সেখানে তিনি কোমায় ছিলেন, তার জিসিএস স্কোর ছিল ৩, এবং তিনি মাইড্রিয়াসিসে ভুগেন। এরপর হাদিকে এভারকেয়ার হাসপাতালে নেওয়া হয়। ১৫ ডিসেম্বর তাঁকে সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সের মাধ্যমে নেওয়া হয়।

মৃত্যুঃ
হাদি টানা ৭ দিন মৃত্যুশয্যায় থাকার পর ২০২৫ সালের ১৮ ডিসেম্বরে সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। তার মৃত্যুতে, বাংলাদেশ সরকার এক দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করে এবং তার পরিবারের দায়িত্ব সরকার নিবে বলে জানায়।

মৃত্যুর সংবাদে সাধারণ মানুষের প্রতিক্রিয়াঃ
ওসমান হাদির মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়ার পর বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় ব্যাপক জনপ্রতিক্রিয়া দেখা যায়। ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, সিলেটসহ দেশের একাধিক শহরে শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষ রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ, প্রতিবাদ মিছিল ও সমাবেশ করে। বিক্ষোভকারীরা হত্যার সঙ্গে জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান। বিভিন্ন স্থানে সড়ক অবরোধ, প্রতীকী জানাজা, দোয়া মাহফিল ও স্মরণসভাও অনুষ্ঠিত হয়। এসব কর্মসূচির ফলে কিছু এলাকায় যান চলাচল ব্যাহত হয়। পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সতর্ক অবস্থান নেয় এবং সংশ্লিষ্ট মহল থেকে সংযম ও শান্ত থাকার আহ্বান জানানো হয়।

রাষ্ট্রীয় প্রতিক্রিয়াঃ
ওসমান হাদির মৃত্যুর পর অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা জরুরি ভাষণ দিয়ে তার মৃত্যুর খবর দেশবাসীকে জানান এবং সকলকে শান্ত থাকার আহ্বান জানান। তার মৃত্যুতে একদিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করেন এবং সরকার তার পরিবারের দায়িত্ব নেয়।

আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়াঃ
হাদির মৃত্যুতে যুক্তরাষ্ট্র শোক জানায়, শোকবার্তায় বলা হয়, “যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস বাংলাদেশের জনগণের সাথে একাত্ম হয়ে তরুণ নেতা শরীফ ওসমান হাদির মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করছে এবং তার পরিবার, বন্ধু ও সমর্থকদের প্রতি আন্তরিক সমবেদনা জানাচ্ছে।” ইইউ দূতাবাস থেকে শোক বার্তায় বলা হয় “শরীফ ওসমান হাদির মৃত্যুতে আমরা গভীরভাবে মর্মাহত এবং আমরা তার পরিবার, বন্ধুবান্ধব ও শোকাহত সবার প্রতি সমবেদনা জানাচ্ছি।” জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় হাদির হত্যাকাণ্ড এবং সংবাদপত্র অফিসগুলোতে হামলার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে। সংস্থাটির প্রধান ভলকার তুর্ক বলেন: "আমি হামলায় হাদির মৃত্যুর ঘটনার দ্রুত, নিরপেক্ষ, পুঙ্খানুপুঙ্খ ও স্বচ্ছ তদন্ত এবং যথাযথ প্রক্রিয়া মেনে দায়ীদের জবাবদিহি নিশ্চিত করার আহ্বান জানাচ্ছি।"

সহিংসতাঃ
ওসমান হাদির মৃত্যুর পর ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রতিবাদী বিক্ষোভ শুরু হয়। রাজধানীতে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে, শাহবাগে হাজার হাজার মানুষ জড়ো হয় এবং দৈনিক প্রথম আলো, ডেইলি স্টার অফিস-সহ বিভিন্ন স্থানে ভাঙচুর ও আগুন লাগানোর ঘটনা ঘটে।

বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, বিশেষ করে বিএনপি, এই হত্যাকাণ্ডকে নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র হিসেবে অভিহিত করে। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস এক দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করে দেশবাসীকে শান্ত থাকার আহ্বান জানান এবং সেইসঙ্গে, কোনো ধরনের 'অপপ্রচার ও গুজবে' কান না দেওয়া এবং হঠকারীমূলক সিদ্ধান্ত না নেওয়ারও আহ্বান জানান তিনি।

সমাধিস্থল: কাজী নজরুল ইসলামের সমাধিসৌধ



Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url