মৃত্যুর পূর্বে বাবা সুলতান সুলেইমানের উদ্দেশ্য লেখা শাহাজাদা মুস্তাফা এর শেষ চিঠি
খলিলুর কাদেরীঃ মৃত্যুর পূর্বে বাবা সুলতান সুলেইমানের উদ্দেশ্য লেখা শাহাজাদা মুস্তাফা এর শেষ চিঠি এর কথাগুলো হুবুহু তোলে দেয়া হলো,
"আমার সুলতান! এই চিঠিটি আমি নিজের হৃদয় থেকে লিখেছি। হয়ত এই চিঠিটি আপনার কাছে পৌছাতে নাও পারে। আর যদি চিঠিটি আপনার কাছে পৌছেও যায়। তাহলে হয়ত চিঠি পৌছানোর আগেই আপনি আমাকে হত্যা করবেন।
হে আমার শাসক! হে আমার প্রিয় পিতা! আপনি যদি এই চিঠিটি পড়েন তাহলে আপনার হৃদয় নিক্ষিপ্ত হবে। কিন্তু ততক্ষণে হয়ত আমি এই বিশ্বাসঘাতক জগৎকে ত্যাগ করব। আপনার হাতে একটি পাপ প্রতিশ্রুতি যে, আপনি একে অপরের সাথে প্রতিশ্রুতি করা সত্ত্বেও নির্দোষ জীবন গ্রহণ করেন।
আমি আপনার সাথে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম যে আমি আপনার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করব না আর আপনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলে আপনি আমাকে আঘাত করবেন না। আমি আমার প্রতিশ্রুতি রেখেছি বাবা। আমার পুত্র মেহমেদ ও কন্যা নার্গিস সুলতানের কসম আমি আপনার সাথে কখনোই বিশ্বাসঘাতকতা করি নি, কখনোই না।
কিন্তু আপনি আপনার প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করেছেন। আমি আপনাকে এই বিশ্বাসঘাতক জগতের কাছে ছেড়ে দিয়েছি যেখানে একটি বাবা তার পুত্রকে হত্যা করেছে।
আমার নাম আপনার মতো ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে লেখা নাও থাকতে পারে। হয়ত আমি আপনার মত বিশ্বকে শাসন করতে পারব না। হয়ত সবাই আমাকে বলবে বিশ্বাসঘাতক শাহাজাদা। যারা বলবে তাদের বলি- আল্লাহ্ বান্দাদের কাছ থেকে যা লুকিয়ে রেখেছেন তা গোপন রাখুন। এমন এক দিন আসবে যে আমার গল্পও বলা হবে, হয়তো বছর, হয়তো শতাব্দী, কিন্তু কেও কেও আমার গল্প বলবে, কেও কেও শুনতে পাবে এবং সত্য শিখবে। সেইদিন শিকারের অধিকার তাদের কাছ থেকে ফিরিয়ে দেওয়া হবে।"
[প্রধান উজির রুস্তম পাশা ও প্রথম সুলাইমানের স্ত্রীর হুরুরেম সুলতান উভয়ই সুলাইমানকে মুস্তফার বিরুদ্ধে উসকিয়ে দেন এবং মুস্তফাকে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির দায়ে অভিযুক্ত করা হয়। ঐতিহাসিক সূত্র দ্বারা জানা যায় ১৫৫৩ সালে সফভীয় ইরানের বিরুদ্ধে অভিযানকালে রুস্তম পাশা সুলাইমানকে অবহিত করেন মুস্তাফা বিদ্রোহ করেছেন এবং সুলাইমানকে হত্যার উদ্দেশ্যে বিশাল সৈনাবাহিনী নিয়ে এগিয়ে আসছেন। বিপরীতে মুস্তাফাকে বলা হয় ইরানের বিরুদ্ধে অভিযানের সময় সুলতান সুলাইমান বিপদে পরেছেন এবং শাহজাদা মুস্তাফার সহায়তা চেয়েছেন। যার পরিণতিতে মুস্তাফা তার সৈন্যবাহিনী নিয়ে সুলতানকে সাহায্য করার জন্য রওনা হন।
সুলতানের তাবুর কাছে সৈন্যসমেত পৌঁছানর পর তাকে জানানো হয় ভেতরে সুলতান তার জন্য অপেক্ষা করছেন। মুস্তাফাকে নিরস্ত্র করে তাবুর ভেতরে প্রবেশ করানো হয়। শাহজাদা মুস্তাফা সুলতান সুলায়মানের তাবুতে প্রবেশ করলে সুলাইমানের নির্দেশে আগে থেকে ওত পেতে থাকা গুপ্ত ঘাতকেরা নিরস্ত্র মুস্তাফাকে আক্রমণ করে এবং শ্বাসরোধ করে হত্যা করে।]